আলতাব আলী ও বৃটিশ বাংলাদেশীর যুদ্ধ-

আলতাব আলী ও বৃটিশ বাংলাদেশীর যুদ্ধ-
আজ শহীদ আলতাব আলীর ৪৭তম মৃত্যু দিন। ১৯৭৮ সালের ৪ মে প্রতিদিনের মতো টেইলারিং ফেক্টোরীর কাজ শেষে খালি টিফিন হাতে নিয়ে সন্ধায় ঘরে ফিরছিলেন সিলেটি বাংলাদেশী ২৪ বছরের যুবক আলতাব আলী। ইষ্ট লন্ডনের ব্রিকলেনের পাশে একটি পার্কের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হন আলতাব আলী।
৩ শেতাঙ্গের ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন। পরবর্তীতে এই পার্কেরই নাম করন করা হয় আফতাব আলী পার্ক।
সেদিন আলতাব আলীর মৃত্যুর পর বৃটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে এক আতংক আর শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো।
হাজারো লাখো বাংগালী জীবনের কত স্বপ্ন আর আকাংকা নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদীর এই পারে চলে এসেছিলো শুধু মাত্র নিজের পরিবারের মূখে হাসি ফুটাতে।
সেই স্বপ্নের লন্ডনে এসেও কাজে যেতে আসতে তার কোন নিরাপত্তা নাই এই কথা ভেবে বৃটিশ বাংগালীরা আস্তে আস্তে মনের আকাংকাকে পুজি করে বুকে শাহস নিয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। বৃটেনের বাংগালীরা এই প্রথম কথা বলতে আরম্ভ করলো, সূর তুললো বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।
বাংগালীদের এই প্রতিরোধের আওয়াজ লন্ডন সহ ইংল্যান্ডের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো। বর্ণবাদ বিরোধী বিভিন্ন বাম সংগঠন সহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী বাংগালীদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে আন্দোলনের গতি বেগবান করে দিলো।
পৃথিবীর মানুষের কাছে বাংগালী এবং বাংলাদেশের নাম পরিচিতি পেতে থাকলো। সেই থেকে বৃটেনে বাংগালীদের যুদ্ধ আরম্ভ হলো। সেই যুদ্ধ ছিলো বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, যুদ্ধ ছিলো নিজের অধিকার ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। বছরের পর বছর যুদ্ধের পর বাংগালীদের অনেক গুলো আকাংকার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।
আলতাব আলীর নামে যে পার্ক হয়েছে সেই পার্ক লন্ডনে বাংগালীদের প্রান কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে ভাষা শহীদদের স্বরনে শহীদ মিনার। বৃটেনের বাংগালীরা আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে তাদের জাতীয় শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করতে জড়ো হয়। আবার নিজের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলতে, নিজের জাতির কল্যাণের আন্দোলনেও এই পার্কে জড়ো হয় তারা।
আলতাব আলী যে স্বপ্ন নিয়ে লন্ডন এসেছিলেন, তার নিজের স্বপ্ন, পরিবারের স্বপ্ন, কোন স্বপ্নই বাস্তবিত করতে পারেন নাই তিনি। তবে তিনি রক্ত দিয়ে পৃথিবীর বুকে পুরো বাংগালী জাতিকে সম্মানিত ও উন্নত করে গেছেন। আজ তার মৃত্যু দিনে শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্বরণ করে তার আত্মার শান্তি কামনা করচছি।
শহীদ আলতাব আলী অমর হউক।
আলীমুজ্জামান,
লন্ডন, ৪ মে ২০২৫।
All reactions:
11