অনেক প্রশ্ন রেখে চিরবিদায় নিলেন সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার

দেশের সাংবাদিকতা জগতের এক দীর্ঘ পথচলার সমাপ্তি ঘটল বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ৭১ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান সম্পাদক-কলামিস্ট বৃহস্পতিবার সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেননি। একদিন পর শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন মেলেনি।
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুকে ঘিরে নেমেছে ধোঁয়াশা। তবে পরিবারের পাশাপাশি সহকর্মী সাংবাদিকদের অনেকে মনে করছেন, প্রবীণ এই সাংবাদিক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কারণ মৃত্যুর আগে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পাঠান একটি খোলা চিঠি, যা প্রকাশের অনুরোধ করেছিলেন ‘শেষ লেখা’ বলে উল্লেখ করে।
সেই চিঠিতে বিভুরঞ্জন সরকার লিখেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার অবস্থান সংবাদপত্রে ভীষণ নাজুক হয়ে উঠেছিল। একটি কলাম প্রকাশের কারণে পত্রিকার কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন তিনি। এমনকি সহকর্মীর সঙ্গেও সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়। চিঠিতে ফুটে ওঠে তার অসহায়তা—“আমি এখন কী করি? কোন পথে হাঁটি?”
সাংবাদিক মহলের অনেকের মতে, এ মৃত্যু কেবল আত্মহত্যা নয়, বরং পদ্ধতিগত হত্যার শামিল। কারণ চিঠিতে তিনি তুলে ধরেছিলেন সংবাদপত্রে সেন্সরশিপ, চাপ এবং ভয়ের পরিবেশের কথা। তিনি লিখেছিলেন, সরকার পরিবর্তনের পরও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কোনো উন্নতি হয়নি, বরং পরিস্থিতি হয়েছে আরও ভয়াবহ।
প্রায় পাঁচ দশক সাংবাদিকতায় নিবেদিত থেকে একটি দৈনিক ও একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিভুরঞ্জন সরকার। সর্বশেষ কাজ করছিলেন দৈনিক আজকের পত্রিকায়। অথচ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে ঘিরে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন—তিনি কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে?