শুক্রবার , ২০ জুন ২০২৫
Friday , 20 June 2025
২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬:২২, ৩ জুন ২০২৫

২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া

২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে 'জনবিরোধী', 'অবৈধ' ও 'ক্ষমতার দর্পণ' আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির অভিমত, অনির্বাচিত এই দখলদার সরকারের জনগণের ওপর কর ধার্য বা পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রণয়নের কোনো আইনি বা নৈতিক অধিকার নেই।

আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, একটি অবৈধ প্রশাসনিক কাঠামো শুধুমাত্র দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে পারে; রাজনৈতিক দর্শনসম্পন্ন বার্ষিক বাজেট দানের এখতিয়ার তাদের নেই। এই বাজেট প্রণয়নে সংসদীয় বিতর্ক, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ বা শ্রমজীবী মানুষের মতামতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি একটি 'ক্লোজড-ডোর টেকনোক্রেটিক প্রক্রিয়া', যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

বাজেট বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্যকে 'ধ্বংসপ্রাপ্ত' বলে চিত্রিত করার চেষ্টাকে 'মিথ্যা প্রচার' ও 'দায় এড়ানোর কৌশল' আখ্যা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের আমলের 'অভূতপূর্ব' প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কারণেই বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৪%-এর নিচে নেমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতার দায় এই সরকারকেই বহন করতে হবে। একদিকে অর্থনীতি ধ্বংসের দাবি, অন্যদিকে এলডিসি উত্তরণের কথা – এই দ্বন্দ্বই সরকারের যুক্তিহীনতাকে প্রমাণ করে।

সরকারের 'প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট নয়' ঘোষণাকে 'প্রতারণামূলক' ও 'লক্ষ্যহীন পথচলা' বলা হয়েছে। মাত্র ৫.৫% প্রবৃদ্ধির নিম্ন লক্ষ্য নির্ধারণ এবং স্বাভাবিক ৭%+ প্রবৃদ্ধি হার থেকে বিচ্যুতিকে সরকারের 'অঙ্গীকারহীনতা' ও 'অদক্ষতার' প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সমালোচকদের বরাত দিয়ে অভিযোগ করা হয়, বড় ধরনের দুর্নীতি ও লুটপাট আড়াল করতেই প্রবৃদ্ধির হিসাব কমিয়ে দেখানো হচ্ছে।

বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রতি কোনো কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গি নেই বলেও অভিযোগ করা হয়। গুরুতর মুদ্রাস্ফীতির (৯-১০%) মুখে পর্যাপ্ত খাদ্য ভর্তুকি বা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো কৌশল অনুপস্থিত। বেসরকারি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীরা উপেক্ষিত, অন্যদিকে কর্পোরেট কর ছাড়ের মাধ্যমে ধনীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্যে জিডিপির মাত্র ১.৯% বরাদ্দ (ডব্লিউএইচও সুপারিশ ৫%) এবং শিক্ষায় প্রকৃত বরাদ্দ হ্রাসকে 'ভয়াবহ অবহেলা' হিসেবে চিত্রিত করা হয়। অন্যদিকে ডিজিটাল নজরদারিতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের সমালোচনা করা হয়।

বাজেটের বড় অংশ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে মেটানোর পরিকল্পনাকে 'বিপজ্জনক' আখ্যা দেওয়া হয়। রাজস্ব আয়ের ভার এখনও পরোক্ষ করের (ভ্যাট) উপরই, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ধনীদের উপর প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো বা কর ফাঁকি রোধে সাহসী পদক্ষেপ অনুপস্থিত। শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন পক্ষপাত এবং গ্রামীণ কৃষক, হাওর বা উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যথাযথ বরাদ্দ ও পরিকল্পনার অভাবও তুলে ধরা হয়।

ডলার সংকট, রেমিট্যান্স হ্রাস, বাণিজ্য ঘাটতি, বেকারত্ব ও জলবায়ু ঝুঁকির মতো সংকটময় সময়ে একটি সাহসী ও পুনর্বিন্যাসকৃত বাজেটের পরিবর্তে এই 'গতানুগতিক', 'আমলাতান্ত্রিক' ও 'জনবিচ্ছিন্ন' বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় ৯% এবং গড়ের তুলনায় প্রায় ২০% কম, উন্নয়ন ব্যয়ে ১০% কাটছাঁট, সরকারি দায় ১৫% বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বাজেট হ্রাস দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকেই দুর্বল করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্পষ্ট ঘোষণা করেছে যে, এই বাজেট দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না; বরং অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে সংকটকে গভীরতর করবে। তাই দলটি এই বাজেট 'ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান' করছে। দলটি একটি মানবিক, অংশগ্রহণমূলক ও বৈষম্যহ্রাসক বাজেটের দাবি জানিয়ে বিবৃতি শেষ করেছে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' এবং 'আঁধার কেটে ভোর হোক, বাংলাদেশ মুক্তি পাক' স্লোগান দিয়ে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়