ঐতিহ্যবাহী চারঘাটের পাদুকা শিল্প বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্প একসময় ছিল উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পটি ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার পথে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারিগরদের দাবি, সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই শিল্পের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
চারঘাট উপজেলার কালোহাটি গ্রাম একসময় ছিল জুতা-স্যান্ডেলের জন্য বিখ্যাত। ৭০-৭৫টি কারখানায় প্রতিদিন কয়েকশ জোড়া চামড়ার জুতা ও স্যান্ডেল তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন নেমে এসেছে গড়ে ৫০ জোড়ায়। মন্দার কারণে কর্মসংস্থানও হ্রাস পেয়েছে। আগে কয়েক হাজার কারিগর এই শিল্পে যুক্ত থাকলেও এখন মাত্র ৩০০ জন কোনোভাবে টিকে আছেন।
কারিগরদের অভিযোগ, ভারত থেকে মেশিনে তৈরি সস্তা রাবারের স্যান্ডেল আমদানির কারণে দেশীয় পণ্য বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। হাতে তৈরি চারঘাটের চামড়ার স্যান্ডেল টেকসই হলেও ভারতীয় স্যান্ডেলের ঝকঝকে ডিজাইন ও কমদাম ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। ফলে স্থানীয় কারিগরদের কষ্টার্জিত পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে।
কারখানার মালিকরা জানান, একসময় ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করলেও এখন একটি কারখানায় গড়ে ১৫-২০ জন শ্রমিক টিকে আছেন। শ্রমিকরা প্রতিদিন গড়ে ২৪ জোড়া স্যান্ডেল বা একটি জোড়া জুতা তৈরি করে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করেন, তবে এজন্য তাদের ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়। মৌসুমভিত্তিক কারখানা গড়ে উঠলেও ঈদের পর সেগুলো আবার বন্ধ হয়ে যায়।
এ পেশায় শিক্ষার্থী থেকে কৃষক অনেকেই যুক্ত আছেন। কেউ পড়াশোনার ফাঁকে, কেউ জমির কাজ শেষে কারখানায় কাজ করেন। কারিগর সাকিব সরকার বলেন, “এক জোড়া স্যান্ডেল বানিয়ে তিনি ২৫-৩০ টাকা পান, দিনে আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা।”
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, যদি সরকারি সহায়তায় কারিগরদের আধুনিক প্রযুক্তি, সহজ ঋণ এবং বাজারজাতকরণের সুযোগ দেওয়া যায়, তবে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ন্যাশনাল সু কারখানার মালিক মকছেদ আলী বলেন, “সরকার উদ্যোগ নিলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প শুধু টিকবেই না, বরং দেশীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।”