স্ত্রীর গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা, আদালতে স্বামীর যাবজ্জীবনের রায়

স্ত্রীর গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা, আদালতে স্বামীর যাবজ্জীবনের রায়
ব্র্যাডফোর্ডে স্ত্রীর উপর ভয়াবহ ছুরি হামলা চালিয়ে হত্যা করিয়াছেন হাবিবুর মাসুম নামক এক ব্যক্তি। হত্যার পূর্বে স্ত্রী কুলসুমা আক্তারের সঙ্গে সন্তানসহ রাস্তা দিয়া হাঁটিতেছিলেন তিনি—দেখিতে ছিল এক শান্ত পারিবারিক দৃশ্য। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সেই শান্তি রূপ নেয় রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডে।
আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে গিয়েছিলেন স্ত্রী
স্বামীর নির্যাতন হইতে বাঁচিবার আশায় কুলসুমা আক্তার ওল্ডহ্যাম হইতে পালাইয়া ব্র্যাডফোর্ডের এক নারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় লইয়াছিলেন। মাসুম স্ত্রীকে ফোন লোকেশনের মাধ্যমে অনুসরণ করিয়া সেই কেন্দ্রে উপস্থিত হন। ঘটনার দিন, তিনি স্ত্রীকে পথ হইতে সরাইবার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে হঠাৎ করিয়া জ্যাকেট হইতে ছুরি বাহির করিয়া অন্তত ২৫ বার আঘাত করেন।
প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যার পর ঠাণ্ডা মাথায় প্রস্থান
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুলসুমা আক্তারকে মাটিতে ফেলে ছুরিকাঘাত ও লাথি মারার পর মাসুম ঠাণ্ডা মাথায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি সন্তানটিকে রাস্তায় ফেলে চলে যান। হত্যার তিন দিন পর, আইলসবেরির এক হাসপাতালের পার্কিং লট হইতে গ্রেপ্তার করা হয় তাহাকে।
আদালতে মিথ্যা কান্না ও আত্মহত্যার নাটক
আদালতে মাসুম দাবি করেন, স্ত্রী যদি তাহার কথা না শুনেন, তবে তাহার সামনে আত্মহত্যা করিবার জন্য ছুরি সঙ্গে আনিয়াছিলেন। স্ত্রী বলিয়াছিলেন, তাহার অভাব পূরণ করিবার জন্য লোকের অভাব হইবে না—এই কথায় তিনি ‘নিয়ন্ত্রণ হারান’। তবে প্রসিকিউটর স্টিফেন উড মন্তব্য করেন, “তার অশ্রু যেমন ভুয়া, তেমনি ভুয়া তাহার আত্মহত্যার নাটক।”
পূর্বে হত্যার হুমকি দিয়াছিলেন
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল অত্যাচারপূর্ণ। মাসুম ছিলেন সন্দেহপ্রবণ ও নিয়ন্ত্রণকারী। একবার স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়াছিলেন এবং গলায় ছুরি ধরিয়াছিলেন। পরে স্ত্রী পুলিশের সহায়তায় ব্র্যাডফোর্ডে স্থানান্তরিত হন। সেখানে থাকাকালীন মাসুম তাহাকে আশ্রয়কেন্দ্রের সামনের ছবি পাঠাইয়া লেখেন, “তোমাকে প্রথম দিনই মারিতে পারিতাম। কেউ তোমাকে আমার মতো ভালোবাসিবে না।”
পুলিশে অভিযোগ, কিন্তু ব্যবস্থা অপ্রতুল
হত্যার এক সপ্তাহ পূর্বে কুলসুমা পুলিশে অভিযোগ দিয়াছিলেন যে মাসুম তাহাকে হত্যার হুমকি দিয়াছেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও মাসুমকে খুঁজিয়া পায় নাই। পরে তথ্য হস্তান্তর করা হয় গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশকে।
দোষী সাব্যস্ত, রায় জুলাই মাসে
মাসুম আদালতে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করিয়া অপহত্যার (manslaughter) দায় স্বীকার করিয়াছিলেন। তবে জুরি তাহাকে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বিচারক জানান, আগামী ২২ জুলাই তাহার যাবজ্জীবন দণ্ডের ন্যূনতম মেয়াদ নির্ধারণ করা হইবে।