শাহজালাল মসজিদ ম্যানচেস্টারে হিফজ গ্রাজুয়েশন সেরেমনি

শাহজালাল মসজিদ ম্যানচেস্টারে হিফজ গ্রাজুয়েশন সেরেমনি: ধর্মীয় আবেগ, সামাজিক সম্প্রীতি ও শিক্ষার অনন্য মিলনমেলা
ম্যানচেস্টারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শাহজালাল জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হলো এক চিরস্মরণীয় ও আবেগঘন হিফজুল কুরআন গ্রাজুয়েশন সেরেমনি। গতকাল শনিবার দিনভর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় এ মহত আয়োজন, যেখানে পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্নকারী ছাত্র মোহাম্মদ জুবায়ের রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘হাফিজে কুরআন’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
আয়োজনে নেতৃত্ব ও সঞ্চালনা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশিক মিয়া সিজিল। অনুষ্ঠানটি দক্ষভাবে পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতিব মাওলানা খায়রুল হুদা খান। সবার উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লিটন আহমদ চৌধুরী, যিনি মসজিদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও হিফজ বিভাগের সাফল্য নিয়ে আলোকপাত করেন।
উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান আলেম ও সমাজপতি:
-
হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আফজাল
-
হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান রুতবাহ
-
মাওলানা আব্দুল মালিক মহসিন – ইমাম, দারুস সালাম জামে মসজিদ
-
হাফিজ মাওলানা ইসলাম উদ্দীন
-
হাফিজ মাওলানা নাজমুল ইসলাম
-
হাফিজ মাওলানা সাদিকুর রহমান
বক্তারা তাদের বক্তব্যে হিফজুল কুরআনের ফজিলত, হাফেজদের দ্বীনি দায়িত্ব ও মুসলিম সমাজে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেন।
মহিমান্বিত সম্মাননা পর্ব
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত ছিল যখন নবহাফিজ মোহাম্মদ জুবায়ের রহমান-এর মাথায় উপস্থিত উলামায়ে কেরাম কুরআনের সম্মাননা ‘পাগড়ি’ পরিয়ে দেন। একইসাথে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে তাকে উপহার হিসেবে প্রদান করা হয় একটি সম্মাননা ক্রেস্ট। উপস্থিত সবাই এই মুহূর্তে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন।
কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণ
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান ও উপস্থিতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে আরও গৌরবান্বিত করেন মসজিদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কমিউনিটির প্রবীণ নেতৃবৃন্দ, যাঁরা দীর্ঘদিন যাবত মসজিদের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন:
-
আলহাজ্ব সোরাবুর রহমান – সাবেক চেয়ারম্যান
-
আলহাজ্ব মান্নান খান – চেয়ারম্যান, গ্রেটার ম্যানচেস্টার বাংলাদেশ এসোসিয়েশন
-
আলহাজ্ব মইনুল আমিন বুলবুল – সাবেক চেয়ারম্যান
-
সুফি খন্দকার – চেয়ারম্যান, খন্দকার ট্রাস্ট
তাঁরা সবাই শাহজালাল মসজিদের হিফজ বিভাগ ও দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে অবদান রাখার জন্য মসজিদ কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।
নেতৃবৃন্দ ও মুরব্বিয়ানদের উপস্থিতি
মসজিদ কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল সদস্যরা অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান সফল করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
-
আলহাজ্ব রইছ আলী – ট্রাস্টি
-
আলহাজ্ব আফিজ আলী – বিশিষ্ট মুরব্বি
-
আলহাজ্ব আবুল কালাম
-
ডা. শাফিউর রাসূল
-
আলহাজ্ব ছালিক বখত
-
কাউন্সিলর আহমদ আলী জেপি
-
আলহাজ্ব আনসার উদ্দীন
মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন:
-
ট্রেজারার জনাব আলী
-
অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ইশতিয়াক আহমদ সুমন
-
এমাদ চৌধুরী
-
হাফিজুর রহমান
-
রাসেল মিয়া
-
আবুল হাসনাত তারেক
-
গিয়াস উদ্দিন
-
সওগাতুল ইমাম চৌধুরী
-
সৈয়দ আতাউর রহমান
-
হাজী ইব্রাহীম আলী
-
সুমন চৌধুরী
-
সারোয়ার খান
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিনিধিত্ব
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সামাজিক অঙ্গনের গুণীজন:
-
কবি তাবেদার রসুল বকুল
-
এনামুল হক দলা মিয়া
-
ব্যারিস্টার ওয়াহিদুর রহমান বিশ্বাস টিপু
-
আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান
-
মাল মুহিবুল্লাহ চৌধুরী জুয়েল
তাঁদের উপস্থিতি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
শেষে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মসজিদের ইমাম মাওলানা খায়রুল হুদা খান একটি হৃদয়ছোঁয়া বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য, প্রজন্মের কুরআনমুখী হওয়া এবং সকল মৃত মুমিন-মুসলমানদের মাগফিরাত কামনায় আল্লাহর দরবারে হাত তুলেন। উপস্থিত সবাই গভীর ভক্তি ও আবেগে ঐ মোনাজাতে শরিক হন।
উপসংহার
শাহজালাল মসজিদের এই হিফজ গ্রাজুয়েশন সেরেমনি শুধু একটি ছাত্রের অর্জনের অনুষ্ঠান নয়; এটি ছিল পুরো কমিউনিটির জন্য এক গর্বের মুহূর্ত, যেখানে ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ এক মঞ্চে এসে মিলিত হয়। প্রবাসে থেকেও ইসলামী শিক্ষা, আদর্শ এবং মূল্যবোধকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার যে প্রত্যয়, এই আয়োজন তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।